নিউজ ডেস্ক::
দেশের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার সৌদি আরবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫২ হাজার ৬২৬ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে ১ লাখ ৫ হাজার ৭১৫ নারী কর্মরত রয়েছেন। তবে এক সমীক্ষায় জানা গেছে, সৌদি আরব থেকে প্রতিবছর ৮৬ হাজার বিদেশি গৃহকর্মী কাজ ছেড়ে পালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে শেষমেষ মাথা ঘামানো শুরু করেছে সৌদি প্রশাসন। কেন এই পলায়ন স্পৃহাÑ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর সুরাহা চায় সৌদি সরকার। গতকাল শনিবার আরব নিউজের এক খবরে বলা হয়েছে, সৌদি প্রশাসন বিদেশ থেকে আসা এসব গৃহকর্মীর ব্যাপারে ব্যাখ্যা খুঁজতে তদন্তে নেমেছে। এ নিয়ে কমিটিও গঠন করা হচ্ছে।
সচ্ছলতার আশায় আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের অনেক নারী পাড়ি জমাচ্ছেন সৌদি আরবে। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে অকথ্য নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের। একপর্যায়ে সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসেও আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের এক জরুরি বার্তায় (বিইআর/আরডব্লিউআর ৪৪৩/২০১৫/৬৩০) বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ফলে এতদিন এ বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকলেও ওই বার্তায় তোলপাড় শুরু হয়েছে সরকারের শীর্ষমহলে। তবে পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ‘অতি স্পর্শকাতর’ আখ্যা দিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বলা হয়েছে, আগামীতে সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠানোর আগে অন্তত ৬ বিষয়ে নিশ্চয়তার কথা ভাবা হচ্ছে। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত এক চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ গৃহকর্মী নেবে সৌদি আরব।
এদিকে সৌদি আরব থেকে গৃহকর্মী পলায়নের ঘটনায় দেশটির মজলিসে শুরার সদস্যরা বলছেন, এটা এখন সৌদি আরবের অন্যতম মাথাব্যথা হয়ে গেছে। কারণ, গৃহকর্মীদের এই পলায়নপ্রবণতা স্থানীয় অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবদুল্লাহ আল ওতাইবি নামের একজন এ সমস্যা সমাধানে রিক্রুটমেন্ট নথিপত্র পর্যালোচনা এবং সমস্যা সমাধানে কী কী সুপারিশ দেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে জানতে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। আরব নিউজের খবরে বলা হয়, গৃহকর্মীদের ঠিকমতো বেতন ও খেতে না দেওয়া এবং পুরুষের নির্যাতন ইত্যাদি কারণে আজ সৌদি আরবের এই দশা। মালিকদের ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন নারীরা।
এদিকে ক্রমেই সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের এ শূন্যতার জন্য মজলিসে শুরা শ্রম মন্ত্রণালয়কে দুষছে। বলা হচ্ছে, গৃহকর্মীদের বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়; এটা তাদের ব্যর্থতা। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত ‘কর্মসংস্থান কৌশল’ বাস্তবায়নও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ঘটনার জন্য সৌদিদের দায়ী করছেন দেশটির অনেক নাগরিক। তারা বলেছেন, গৃহকর্মীদের পালানোর যে সমস্যা সৌদি আরবে উত্তরোত্তর বাড়ছে, তা কমাতে হলে বা সমাধান করতে হলে গৃহকর্মীদের ওপর মালিকদের অসৎ আচরণ বন্ধ করতে হবে।
দূতাবাসের পরামর্শ
এদিকে এখন থেকে সৌদিতে বাংলাদেশি নারীকর্মী পাঠানোর আগে ৬ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এগুলো হলোÑ এক. রিক্রুটিং এজেন্সি সম্পর্কে আরও যাচাই করে তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত; দুই. মেগা ব্যতীত অন্য সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুর আগে দূতাবাসের মতামত নেওয়া; তিন. যেসব সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে স্পন্সর পরিবর্তন করেছে, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা; চার. বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়া গৃহকর্মী, সংশ্লিষ্ট এজেন্সি ও স্পন্সর সম্পর্কিত তথ্যাদি বিএমইটি থেকে দ্রুততার সঙ্গে দূতাবাসে পাঠানো; পাঁচ. নতুন কর্মী পাঠনোর আগে তাদের বয়স, স্পন্সরের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও পুরুষ সদস্যদের বয়স বিবেচনা করে অতি সতর্কতা অবলম্বন করা এবং ছয়. পুরুষকর্মী এবং অন্য সেক্টরে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদি কর্তৃপক্ষের অবস্থান ও ইতোমধ্যে পাঠানো গৃহকর্মীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নতুন নারীকর্মী পাঠানোর ব্যাপারে কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ।
পাঠকের মতামত